ঢাকা   মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
দৈনিক রেলওয়ে বার্তা

রেলওয়ের টেম্পিং কার্যক্রম নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও তথ্যভিত্তিহীন



রেলওয়ের টেম্পিং কার্যক্রম নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও তথ্যভিত্তিহীন

বাংলাদেশ রেলওয়ের টেম্পিং কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত “Railway BR Tamping Activities Corruption: Questions Raised Over Former Chief Engineer” শীর্ষক প্রতিবেদনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেছেন— সংবাদটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তথ্যভিত্তিহীন এবং সাংবাদিকতার নীতিমালা পরিপন্থীভাবে প্রচারিত হয়েছে। রেলওয়ের অর্থ ও অডিট শাখা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবেদনে যেসব “অডিট আপত্তি” উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো আসলে ড্রাফট অডিট প্যারা (Draft Audit Para) হিসেবে উত্থাপিত হয়েছিল। পরে রেলওয়ের লিখিত জবাব ও নিরীক্ষা পর্যালোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

 এ বিষয়ে পরিবহন অডিট অধিদপ্তর, অডিট কমপ্লেক্স, সেগুনবাগিচা, ঢাকা থেকে প্রেরিত ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখের এক সরকারি পত্রে উপ-পরিচালক মোঃ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়— “নিরীক্ষা সন ২০১৯–২০ ও ২০২০–২১ অর্থবছরের টেম্পিং কার্যক্রম সংক্রান্ত আপত্তি পর্যালোচনার পর ‘নিষ্পত্তিকৃত’ বলে গণ্য করা হলো।” অতএব, সরকারি চিঠিতে নিষ্পত্তিকৃত একটি বিষয়কে দুর্নীতির অভিযোগ হিসেবে প্রকাশ করা “অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর প্রচেষ্টা” বলে মন্তব্য করেছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, টেম্পিং কার্যক্রম কোনো নতুন প্রকল্প নয়; এটি রেললাইনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ (maintenance schedule)-এর অংশ। ট্র্যাকের স্থায়িত্ব, গতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিতভাবে এই কাজ সম্পন্ন হয়। তাদের ভাষায়— “যে বিষয়গুলো প্রতিবেদনে দুর্নীতি হিসেবে দেখানো হয়েছে, তা আসলে ‘maintenance accounting adjustment’। 

এগুলো প্রশাসনিক ব্যাখ্যা-সাপেক্ষ বিষয়, দুর্নীতি নয়।” রেলওয়ের অভ্যন্তরীণ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুবকতাগিন দীর্ঘদিন সততা, দক্ষতা ও পেশাগত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনটি তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও চরিত্র হননের প্রচেষ্টা বলে মনে করছেন সহকর্মীরা। একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন— “কিছু অসন্তুষ্ট ঠিকাদার ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে সংবাদমাধ্যম ব্যবহার করছে। এতে একজন কর্মকর্তার নয়, পুরো রেলওয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।” বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি (BRPS) এক বিবৃতিতে জানায়— “অসম্পূর্ণ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্যের ভিত্তিতে এমন প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে রেলওয়ে ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এটি সাংবাদিকতার নীতিমালা লঙ্ঘন।” চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিভাগ জানায়, টেম্পিং মেশিন ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল Railway Workshop Code অনুযায়ী। যেহেতু মেশিনগুলো রেলওয়ের নিজস্ব সম্পদ, তাই ঠিকাদারদের ব্যবহারের জন্য কোনো অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হয়নি। চুক্তিমূল্য নির্ধারণের সময়ই এসব ব্যবহারের হিসাব অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা অর্থ ও ক্রয়বিধি অনুসারে সম্পন্ন হয়েছে। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক অতীতেও একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, যা “repetitive defamation” হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন— “একই বিষয়ের পুনরাবৃত্ত প্রচার জনগণকে বিভ্রান্ত করে। এটি সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও পেশাগত নীতিবোধের পরিপন্থী।” রেলওয়ের অর্থ শাখা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯–২০ অর্থবছরের টেম্পিং কার্যক্রমের সব ব্যয় অডিট আপত্তি থেকে মুক্ত হয়ে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে। পরবর্তীতে Public Accounts Committee (PAC) যাচাই-বাছাই শেষে “No Irregularity Found” মন্তব্য প্রদান করে। ফলে প্রতিবেদনে উল্লিখিত দুর্নীতির অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে নিশ্চিত করেছে রেলওয়ে প্রশাসন। রেলওয়ের কর্মকর্তারা প্রশ্ন তুলেছেন— “যে বিষয়ে অডিট অধিদপ্তর আনুষ্ঠানিকভাবে নিষ্পত্তি ঘোষণা করেছে, সেটিকে আবার দুর্নীতি হিসেবে উপস্থাপন করা এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তার বক্তব্য না নিয়েই প্রতিবেদন প্রকাশ করা— এটিকে কি সাংবাদিকতা বলা যায়?” তাদের মতে, একতরফা ও যাচাইবিহীন প্রতিবেদন সাংবাদিকতার নীতিমালা নয়, বরং ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থরক্ষার অপচেষ্টা। রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলেন, কোনো চূড়ান্ত তদন্ত বা প্রশাসনিক যাচাই ছাড়া এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করা দুঃখজনক।

 এতে জনআস্থা ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং রেলওয়ের চলমান সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রমে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। তারা আশা প্রকাশ করেন— “গণমাধ্যম ভবিষ্যতে তথ্য যাচাই ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে এবং রেলওয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী প্রচারণা থেকে বিরত থাকবে।” সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, “টেম্পিং কার্যক্রমে দুর্নীতি” শীর্ষক প্রতিবেদনটি নিষ্পত্তিকৃত অডিট আপত্তির বিকৃত উপস্থাপন, যা একজন সৎ কর্মকর্তার সুনামহানি ও রেলওয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে প্রচারিত হয়েছে।

আপনার মতামত লিখুন

দৈনিক রেলওয়ে বার্তা

মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫


রেলওয়ের টেম্পিং কার্যক্রম নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও তথ্যভিত্তিহীন

প্রকাশের তারিখ : ০৩ নভেম্বর ২০২৫

featured Image

বাংলাদেশ রেলওয়ের টেম্পিং কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত “Railway BR Tamping Activities Corruption: Questions Raised Over Former Chief Engineer” শীর্ষক প্রতিবেদনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেছেন— সংবাদটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তথ্যভিত্তিহীন এবং সাংবাদিকতার নীতিমালা পরিপন্থীভাবে প্রচারিত হয়েছে। রেলওয়ের অর্থ ও অডিট শাখা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবেদনে যেসব “অডিট আপত্তি” উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো আসলে ড্রাফট অডিট প্যারা (Draft Audit Para) হিসেবে উত্থাপিত হয়েছিল। পরে রেলওয়ের লিখিত জবাব ও নিরীক্ষা পর্যালোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

 এ বিষয়ে পরিবহন অডিট অধিদপ্তর, অডিট কমপ্লেক্স, সেগুনবাগিচা, ঢাকা থেকে প্রেরিত ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখের এক সরকারি পত্রে উপ-পরিচালক মোঃ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়— “নিরীক্ষা সন ২০১৯–২০ ও ২০২০–২১ অর্থবছরের টেম্পিং কার্যক্রম সংক্রান্ত আপত্তি পর্যালোচনার পর ‘নিষ্পত্তিকৃত’ বলে গণ্য করা হলো।” অতএব, সরকারি চিঠিতে নিষ্পত্তিকৃত একটি বিষয়কে দুর্নীতির অভিযোগ হিসেবে প্রকাশ করা “অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর প্রচেষ্টা” বলে মন্তব্য করেছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, টেম্পিং কার্যক্রম কোনো নতুন প্রকল্প নয়; এটি রেললাইনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ (maintenance schedule)-এর অংশ। ট্র্যাকের স্থায়িত্ব, গতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিতভাবে এই কাজ সম্পন্ন হয়। তাদের ভাষায়— “যে বিষয়গুলো প্রতিবেদনে দুর্নীতি হিসেবে দেখানো হয়েছে, তা আসলে ‘maintenance accounting adjustment’। 

এগুলো প্রশাসনিক ব্যাখ্যা-সাপেক্ষ বিষয়, দুর্নীতি নয়।” রেলওয়ের অভ্যন্তরীণ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুবকতাগিন দীর্ঘদিন সততা, দক্ষতা ও পেশাগত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনটি তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও চরিত্র হননের প্রচেষ্টা বলে মনে করছেন সহকর্মীরা। একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন— “কিছু অসন্তুষ্ট ঠিকাদার ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে সংবাদমাধ্যম ব্যবহার করছে। এতে একজন কর্মকর্তার নয়, পুরো রেলওয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।” বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি (BRPS) এক বিবৃতিতে জানায়— “অসম্পূর্ণ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্যের ভিত্তিতে এমন প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে রেলওয়ে ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এটি সাংবাদিকতার নীতিমালা লঙ্ঘন।” চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিভাগ জানায়, টেম্পিং মেশিন ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল Railway Workshop Code অনুযায়ী। যেহেতু মেশিনগুলো রেলওয়ের নিজস্ব সম্পদ, তাই ঠিকাদারদের ব্যবহারের জন্য কোনো অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হয়নি। চুক্তিমূল্য নির্ধারণের সময়ই এসব ব্যবহারের হিসাব অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা অর্থ ও ক্রয়বিধি অনুসারে সম্পন্ন হয়েছে। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক অতীতেও একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, যা “repetitive defamation” হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন— “একই বিষয়ের পুনরাবৃত্ত প্রচার জনগণকে বিভ্রান্ত করে। এটি সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও পেশাগত নীতিবোধের পরিপন্থী।” রেলওয়ের অর্থ শাখা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯–২০ অর্থবছরের টেম্পিং কার্যক্রমের সব ব্যয় অডিট আপত্তি থেকে মুক্ত হয়ে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে। পরবর্তীতে Public Accounts Committee (PAC) যাচাই-বাছাই শেষে “No Irregularity Found” মন্তব্য প্রদান করে। ফলে প্রতিবেদনে উল্লিখিত দুর্নীতির অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে নিশ্চিত করেছে রেলওয়ে প্রশাসন। রেলওয়ের কর্মকর্তারা প্রশ্ন তুলেছেন— “যে বিষয়ে অডিট অধিদপ্তর আনুষ্ঠানিকভাবে নিষ্পত্তি ঘোষণা করেছে, সেটিকে আবার দুর্নীতি হিসেবে উপস্থাপন করা এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তার বক্তব্য না নিয়েই প্রতিবেদন প্রকাশ করা— এটিকে কি সাংবাদিকতা বলা যায়?” তাদের মতে, একতরফা ও যাচাইবিহীন প্রতিবেদন সাংবাদিকতার নীতিমালা নয়, বরং ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থরক্ষার অপচেষ্টা। রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলেন, কোনো চূড়ান্ত তদন্ত বা প্রশাসনিক যাচাই ছাড়া এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করা দুঃখজনক।

 এতে জনআস্থা ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং রেলওয়ের চলমান সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রমে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। তারা আশা প্রকাশ করেন— “গণমাধ্যম ভবিষ্যতে তথ্য যাচাই ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে এবং রেলওয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী প্রচারণা থেকে বিরত থাকবে।” সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, “টেম্পিং কার্যক্রমে দুর্নীতি” শীর্ষক প্রতিবেদনটি নিষ্পত্তিকৃত অডিট আপত্তির বিকৃত উপস্থাপন, যা একজন সৎ কর্মকর্তার সুনামহানি ও রেলওয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে প্রচারিত হয়েছে।


দৈনিক রেলওয়ে বার্তা

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মো: মনিরুজ্জামান (মনির) 

কপিরাইট © ২০২৫ দৈনিক রেলওয়ে বার্তা । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত